Finance

গ্রাফিক ডিজাইন করে অনলাইনে আয়ের উপায়

আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনলাইন ঘরে বসে আয় করা তাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণীত হয়েছে।বর্তমানে অনলাইনে বসে আয় করার লক্ষ্যে ,কাজ পাওয়ার জন্য যেমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে ঠিক তেমনি ওয়েবসাইট গুলোতে রয়েছে অনেক কাজের ক্যাটাগরি। তার মধ্যেই একটি হলো গ্রাফিক ডিজাইন , এই সেক্টর এর মাধ্যমে আসলে কেমন আয় করতে পারবেন এবং তা কীভাবে আজ এগুলো নিয়েই কিছু আলোচনা করবো। 

গ্রাফিক ডিজাইন কি ?

গ্রাফিক ডিজাইন হলো এমন একটি শিল্প প্রক্রিয়া যা শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে ধারণার আদান প্রদান করে। অথবা,যেকোনো ধরনের লোগো ডিজাইন,ওয়েবসাইট,বই এবং যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন সাজানোর জন্য Graphics Design এর প্রয়োজন।এটি text , picture এর সংমিশ্রণ। এটি মানুষের চিন্তা এবং পছন্দকে প্রভাবিত করে। এটি একটি পেশা,অ্যাকাডেমিক শৃঙ্খলা এবং প্রয়োগ শিল্প।এটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের সাথে সামাজিক গোষ্ঠীতে ও নির্দিষ্ট বার্তা প্রেরণের উদ্দেশ্যে চাক্ষুষ যোগাযোগের প্রজেক্ট জড়িত। 

গ্রাফিক এর কাজ কীভাবে এবং কত দিনে শিখা যায় ?

দেখুন গ্রাফিক্স এর কাজ শিখতে আসলে কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।কারণ যেকোনো কিছু শিখতে বা দক্ষতা অর্জন করতে একজন ব্যক্তির ধৈর্য,শিক্ষার আগ্রহ এবং সে কতটুকু সময় দিচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে।কিন্তু এই সম্বন্ধে আপনাকে কিছু ধারণা দেওয়া যায়। যেমন-

বর্তমানে এমন অনেক বেসরকারি ইউনিভার্সিটি আছে যেখান থেকে স্বল্প খরচে ৩ বছর অথবা ৪ বছর মেয়াদি এই কোর্স আছে।যেখান থেকে আপনি এই বিষয় এর উপরে ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন। এছাড়া বাংলাদেশে এখন অনেক ট্রেনিং সেন্টার যাচ্ছে যারা এই বিষয় এর উপরে ৩ মাস,৬মাস অথবা ১২মাসের কোর্স করানোর মাধ্যমে উন্নত মানের শিক্ষা দিয়ে থাকে।এটি অনলাইন অথবা অফলাইন দুই ভাবেই শিখা যায়।এই ধরনের প্রতিষ্ঠান  থেকে সার্টিফিকেটও প্রদান করে থাকে।এছাড়া আপনি youtube থেকেও ভিডিও দেখে দেখে শিখতে পারেন।অনেক স্বনামধন্য ডিজাইনার আছে যারা ইউটিউবে ফ্রি ক্লাস করিয়ে থাকে। 

উপরে বর্ণিত এই মাধ্যম গুলোর সাথে-সাথে আপনি google এবং youtube থেকেও অনেক সাহায্য পেতে পারেন যা আপনার শিখার দক্ষতাকে আরো বাড়াতে এবং শক্ত করতে সাহায্য করবে।এর পাশাপাশি আপনাকে র একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে তা হল,এই কাজের জন্য যে সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করা হয় যেমন ধরেন- Adobe illustrator ,Adobe photoshop ,logo maker ইত্যাদি সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করার প্রক্রিয়া গুলো ভালো করে রপ্ত করে নিবেন।এই সফটওয়্যারগুলোর পূর্ণাঙ্গ টিউটোরিয়াল আপনি youtube এ খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।    

একজন ডিজাইনার এর অনলাইন এবং চাকরির মাধ্যমে মাসিক ইনকাম  

একজন ডিজাইনার অনলাইন এ ফ্রীল্যানসিং এবং প্যাসিভ ইনকাম এর মাধ্যমে অথবা মাসিক বেতন ভিত্তিতে কোনো কোম্পানিতে চাকরি করে টাকা ইনকাম করতে পারে।অথবা অনেকে আছে যারা দুই দিকেই কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।

অনলাইনে কাজ করার অনেক ওয়েবসাইট আছে যার মাধ্যমে সরাসরি আপনি খুব সহজেই বায়ার এর সাথে আপনার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে পারেন।এক্ষেত্রে যে-সব ওয়েবসাইট গুলো উল্লেখ্য যেমন- Up work.com,Fiverr.com,freelancer.com এবং 99Designs.com ইত্যাদি। এই সাইট গুলো বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ জন্য খুব পপুলার।এক জন ডিজাইনার চাইলেই এই ওয়েবসাইট গুলো থেকে অনেক কাজ পেয়ে যাবেন যার মাধ্যমে কাজ করে ৪০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা যায় করা যায় খুব সহজে।যদিও আপনার কাজ করার উপরে এই উপার্জন বাড়বে অথবা কমবে। 

এখন আসি চাকরির কোথায়,বাংলাদেশে বর্তমানে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই কাজের জন্য বেতন ভিত্তিক ব্যক্তি নিয়োগ প্রদান করে।যে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩০,০০০ – ৪০,০০০ টাকা বেতন প্রদান করে থাকে এই কাজের জন্য।এছাড়াও আপনি দেশে বিদেশে অনেক কোম্পানিতে রিমোট জব করেও টাকা যায় করতে পারবেন। এছাড়াও অনেকে চাকরির পাশাপাশি ও ফ্রীল্যানসিং ও করে থাকে।

গ্রাফিক ডিজাইনার কীভাবে প্যাসিভ ইনকাম করে

প্যাসিভ ইনকাম সম্পর্কে আমাদের অনেকের ই তো ধারণা আছে।তারপরও একটু বলে রাখি,যদি আপনি কতগুলো ডিজাইন করে মাইক্রোষ্টক সাইড গুলোতে আপলোড করে রাখলে তৈরি কৃত ডিজাইন গুলো মানুষের কাছে সারা বছর বিক্রি হতে থাকাই হচ্ছে প্যাসিভ ইনকাম।মূলত একবার ডিজাইন করে সারা বছর ধরে বিক্রি হয়ে আয় হওয়ার নাম প্যাসিভ ইনকাম। 

ডিজাইন দিয়ে কীভাবে প্যাসিভ ইনকাম হয়

বর্তমানে অনেক কাস্টমার আছে যারা,প্রস্তুত আছে মানে হচ্ছে অলরেডি তৈরি করা আছে এরকম ডিজাইন গুলোর প্রয়োজন পরে।অনলাইন এ কিছু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট আছে যেখানে এই ধরনের ডিজাইন গুলো পাওয়া যায়।বিভিন্ন কাস্টমার এসে এখন থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ডিজাইন গুলো ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নেয়।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করলে তাতে আপনার লাভ কি ! হা,আপনার লাভ আছে।কাস্টমার বা ভিজিটররা সাধারণত দুই ভাবে তাদের ডিজাইন ক্রয় করে,কেউ হয়তোবা ওয়ান টাইম এর জন্য কিনে কেউ আবার মাসিক বা বছর ভিত্তিক ডিজাইন গুলো কিনে থাকে যাতে তারা তাদের ইচ্ছামতো ডিজাইন গুলো ডাউনলোড করে নিতে পারে।

মূলত এখানে একজন ডিজাইনার ওয়েবসাইট এর মাধ্যমেই তাদের টাকা পেয়ে থাকেন।কোনো ডিজাইনার যখন কোনো ডিজাইন সেখানে আপলোড করে প্রাইস সহ,এরপরে একজন কাস্টমার সেই নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে অনলাইনে।তখন ওয়েবসাইট তাদের একটা মার্কেটিং কষ্ট কেটে নিয়ে বাকি টাকা ডিজাইনার এর অ্যাকাউন্টে পে করে দেয়।

প্যাসিভ ইনকাম এর জনপ্রিয় কিছু মার্কেটপ্লেস 

অনলাইনে প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য বেশ কিছু মার্কেটপ্লেস আছে।কিন্তু সব মার্কেটপ্লেস এক না।তাই আমার জানা মোতে অনলাইনে বেস্ট কিছু মার্কেটপ্লেস নিয়ে নিচে আলোচনা করছি- 

Citrokor : এটি একটি বাংলাদেশী মার্কেট প্লেস । এখানে বেশির ভাগ মোবাইল ডিজাইনার মজার বিষয় হলো আপনি চাইলে শুধু মাত্র মোবাইল ব্যাবহার করে ডিজাইন বানিইয়ে তা বিক্রি করতে পারবেন। এই মার্কেট প্লেস এ আপনি ডিজাইন বিক্রি করে বেসি লাভবান হবেন কারন শুধু মাত্র কিছু পারসেন্ট তারা নেয় এবং বাকি টাকা আপনার একাউন্ট এ পাবেন।

Adobe stock : ফেমাস মার্কেটপ্লেস এর মধ্যে এটি অন্যতম।এই ওয়েবসাইট এর কোয়ালিটি মেইনটেইন করে তাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ডিজাইন আপলোড করতে থাকলে এটি অল্প সময়ে ভালো আউটপুট দিবে।এই ওয়েবসাইটে একজন ডিজাইনার প্রতি ডাউনলোড এর জন্য । 0.33 $ থেকে 5  $ পর্যন্ত পেয়ে থাকে। 

Shutterstock : অন্যসব মার্কেটপ্লেস থেকে এই মার্কেটপ্লেস এর সিস্টেম ভালো হওয়ায় এখানে ডাউনলোড এর পরিমাণ বেশি।ভালো মানের ফটো কালেকশন আপনার কাছে থাকলে সেগুলো আপনি এখানে আপলোড দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।এই মার্কেটপ্লেস এ সাধারণত প্রতি ডাউনলোডে 5 $ থেকে 50 $ পর্যন্ত আপনি ইনকাম করতে পারবেন। এই মার্কেটপ্লেসটি ফটো কেন্দ্রিক বেশি হলেও এখানে ডিজাইনও আপলোড করা যায়,যার জন্য আপনি প্রতি ডাউনলোডে 0.10 $ থেকে 0 .45 $ পর্যন্ত আপনি আয় করতে পারবেন। 

Freepik : ভালো ডাউনলোড এর জন্য বর্তমান সময়ে এ ওয়েবসাইটটি খুবই জনপ্রিয়।আপনি যদি বিচক্ষণ হন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার মার্কেটিং করা থাকে তাহলে আপনি এখানে ডিজাইন আপলোড করে খুব অল্প সময়ে ভালো আয় করতে পারবেন। 

PNG Tree : এই মার্কেটপ্লেসটি হাই প্রোফাইলের একটি মার্কেটপ্লেস।একটি ডিজাইন একসাথে ৩টি মার্কেটপ্লেসে আপলোড করা গেলেও এই মার্কেটপ্লেস এর ক্ষেত্রে ভিন্ন।PNG Tree মার্কেটপ্লেস এ আপনি যেই ডিজাইন আপলোড করবেন তা অন্য কোনো ওয়েব সাইটে আপলোড করতে পারবেন না।ইউনিক ডিজাইন এর সমারোহ এই এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।এই প্লেসে ১ হাজার ডাউনলোডে 50 $ দেয়া থাকে। 

Alamy : এই মার্কেটপ্লেস এর কমিশন % এর উপরে দেয়।প্যাকেজ সমূহের প্রায় ৪০% – ৫০% কমিশন তারা আপনাকে তারা দিবে।কিন্তু মিনিমাম 50 $ হলে তাহলেই আপনি টাকা তুলতে পারবেন।এটি UK এর একটি ওয়েবসাইট। 

Creative Market : পপুলার মার্কেটপ্লেস এর মধ্যে এটি একটি।ফ্রন্ট,গ্রাফিক্স,ইলাস্ট্রেশন,মেকআপ,স্টক ফটোগ্রাফি,ওয়েব থিম ইত্যাদি পণ্য এখানে বিক্রি করে ইনকাম করতে পারবেন।এই মার্কেটপ্লেসে আপনার ডিজাইনের মূল্য আপনি নিজেই দিতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও Exclusive , Non-exclusive আরো অনেক মার্কেটপ্লেসে আছে। 

নতুনরা কি পারবে প্যাসিভ ইনকাম করতে 

দেখুন আসলে প্যাসিভ ইনকাম করার জন্য নতুন পুরাতন হওয়া লাগে না।অনেক অভিজ্ঞ ডিজাইনার আছে যাদের টেকনিক্যাল নলেজ না থাকার কারণে ভালো ইনকাম করতে পারছে না। তাই মূলত ফ্রীল্যানসিং বলেন বা প্যাসিভ ইনকাম বলেন,যেটাই করতে চান না কেন তাহলে অবশ্যই আপনার মধ্যে ক্রেয়েটিভ ডিজাইন শিখতে এবং জানতে হবে।

পরিশেষে মূল বিষয়টি হচ্ছে,গ্রাফিক্স ডিজাইন এর চাহিদা বর্তমানে খুব বেশি।চাকরি,ফ্রীল্যানসিং অথবা প্যাসিভ ইনকাম এর জন্য এই প্লাটফর্ম এর জুড়ি নেই।চাকরির পাশাপাশি ও দিকে কাজ করে টাকা ইনকাম করা যায়। তাই আসলে ঘুরিয়া ফিরিয়ে না বলে সোজা সুজি বলতে চাই সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই এই প্লাটফর্ম এ আপনার ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শিখতে নেমে পড়ুন।ইনশাআল্লাহ! সফলতা আসবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *